html

Sunday 29 July 2018

স্বাতী নাথ

আমার জানা রবীন্দ্রনাথ


স্বাতী নাথ


প্রনমী তোমায় রবীঠাকুর। তোমার অনবদ্য লেখা করেছে আমাকে অনুপ্রানীত, কোথায় তুমি ছেয়ে নেই? আছো জন্মে, মৃত্যুতে, ভক্তিতে, প্রকৃতিতে, বিষাদে সর্ব ক্ষেত্রে সমানভাবে বীরাজমান।
যেমন তুমি বৈশাখ কে করেছো আমন্ত্রণ সকল পুরাতন কে ঘুচিয়ে দিয়ে সকল কলুষতা কে দূর করে নূতন কে করেছো আহ্বান, আবার দেখিয়েছ তার রুদ্র রূপ তপ্ত শুস্ক ধরণীকে নূতন প্রাণ দেওয়ার জন্য তুমি আহ্বান করেছ বর্ষা কে, তোমার লেখনীতে ফুটে উঠেছে তারপরূপ রূপ, শুস্ক ধরনী নূতন প্রাণ পেয়ে শষ্য শ্যামলা হয়ে উঠেছে, তুমি প্রতিটি ফুল কে স্থান দিয়েছ তোমার গানে , কবিতায়। বর্ষার জল পেয়ে তোমার মল্লিকা বনে কুঁড়ি আসে, মাধবীলতা ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেয়, দোয়েল কোকিলের গানে ঘুম ভাংগে, তরুলতা সলজ্জভাবে বেড়ে উঠে ফুলে ছেয়ে যায়, তোমার ঘরে বেলফুল, বকুলের গন্ধেবাতাস ভরে থাকে,জ্যোৎস্না রাতে রজনীগন্ধা তার গন্ধসুধা উজাড় করে দেয়, করবী, মালতী, জুঁই সবাই তোমার প্রাণ ভরে থাকে, পথভোলা কে পথ দেখায়, নদীর মাঝির ভাটিয়ালী গান বা রাঙামাটির পথে বাউলের গান কিছুই তো বাদ যায়নি তোমার লেখনীতে।
শরত কে দিয়েছ এক আলাদা স্থান, কাশ ফুলে হাওয়ার ঢেউ, শুলী ফুলের গান”শিউলী ফুল শিউলী ফুল কেমন ভুল এমিন ভুল”। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, পুকুরে পদ্ম, পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু, পদ্মের বুকে ভ্রমর করে গুন গুন। তারপর দীপের মালা সাজিয়ে তুমি হীমের রাতের আকাশ কে করেছ অপরূপ, হোকনা শুন্য বাগান, না গান গাক দোয়েল কোকিল আমলোকি তো আছে সে তার ডালে ডালে নাচন জাগিয়ে শীত করে আমন্ত্রণ, পাকা ফসলে ঘর ভরে যায় শুরু হয় পৌষ পার্বণ। আর বসন্ত? সেতো তোমার প্রিয় ঋতু, তাকে যে কত রূপ কত রঙে তুমি সাজিয়েছ, কাকে না তুমি স্থান দিয়েছ, ফাগুনের রঙে রঙে আগুন ধরিয়েছ, বসন্তের ফুলে মালা গেঁথেছ, তোমার মনের দখিন দুয়ার দিয়েছ খুলে, বসন্ত উৎসবে মেতে উঠেছ তুমি যা আজও ছলে আসছে শান্তিনিকেতনে, তোমার স্বপ্নের জায়গায়।
তোমার গান কবিতা পড়ে শিখেছি অনেক, শৈশবে শিখেছি যে তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ কে ছাড়িয়ে উঁকি মারছে আকাশে, বা ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে, সোজা নয়, সব গ্রাম তার তীরে তীরে, ছোটবেলাতে তোমার বই পরে জেনেছি তখনকার দিনে গরুরগাড়ি তে জিনিষ নিয়ে যাওয়া হোতো, কত সব্জীর নাম শিখিয়েছ আলু, পটল, মূলো বা জল্পাই, তার আবার আলাদা মানেও শিখিয়েছ।
এতো গেলো শৈশবের কথা এছাড়া জীবনের সর্বক্ষেত্রে তুমি ছড়িয়ে আছ আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু তাকে জয় করে জীবনে চলার পথে কি করে শান্তি আনতে হয় তা শিখিয়েছ, প্রেমেও শান্ত ধীর স্থির হওয়ার শীক্ষা তুমিই দিয়েছ। ব্যর্থতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সফলতাকে খুঁজে বার করতে শিখিয়েছ। অজানাকে ভয় না করে ভঙ্গুর কন্টকিত পথে যদি কোনো সাথী না থাকে তাহলে একলা চলার মন্ত্রণা তুমিই দিয়েছ।
শুধু দেশে নয় বিদেশ কেও জয় করেছ নিজের লেখনী দ্বারা, ইংরেজের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব শুধু দেশের জন্য নয় আরো অন্য দেশের জন্যও হয়েছ যেমন আফ্রীকা কে চিনিয়েছ সবাইকে তাদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের কথা জানিয়েছ সকলকে, সমস্ত হিংস্রতা কে ত্যাগ করে মানবতা উঁচুতে তুলে ধরেছ।আবার অন্যদিকে অতি সাধারণ মেয়েকে কী ভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়, পুরুষের অবহেলাকে উপেক্ষা করে নিজেকে শিক্ষীত করতে হপ্য তাও শিখিয়েছ, কালো মেয়ের রূপ অপরূপ ভাবে বর্ণনা করেছ, বর্ণনা করেছ তার গুণ সেখানে তার কালো রঙ কোথায় হারিয়ে গেছে তা বোঝাই যায়নি। মানুষের চেতনা কে জাগ্রত করে উঁচ নীচ ভেদাভেদ মিটিয়ে মনুষত্ব কে তুলে ধরেছ, সকল কে ভালোবাসতে শিখিয়েছ। তুনিই আবার ভগবান কে প্রশ্ন করেছ সমাজের কুরীতি, অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছ। শিশুদের জন্যও তোমার অবদান অনেক—মা ছেলে, বাবা মেয়ের ভালোবাসা তুলে ধরেছ নিপুণ ভাবে, খেলার ছলে কৌতুক করে দামোদর শেঠ কে খাওয়াতে গিয়ে কোথায় কি ভালো পাওয়া যায় তার বিশদ বিবরণ দিয়েছ। বালকের স্বপ্নের ভিতর প্রবেশ করে তাকে বীরপুরুষ বানিয়েছ, অন্যায়ের বিরূদ্ধে সাহস ও শক্তি যুগিয়েছ, অবলা নারীকে  সবলা বানয়েছ, আরো কত কীযে তুমি রচনা করেছ—মহাভারতেও তুমি হাত দিয়েছ, কর্ণ কুন্তি কে দাঁড় করিয়েছ মুখোমুখি, সত্যের কাঠগড়ায়, অর্জুনের প্রতি চিত্রাঙ্গদা র প্রেমের অপূর্ব বর্ণন, কী ভাবে অর্জুনের প্রেমে চিত্রাংদা নিজেকে করেছে পরিবরতন। জাতীর উঁচ নীচ ভেদাভেদ মিটিয়েছ—যেখানে চন্ডালিকার কাছ থেকে বৌদ্ধ সন্যাসী জল চেয়ে খায় যাকে এতদিন সবাই ঘৃণা করেছে, রাজ নতী বাসব্দত্তাকে সন্যাসী উপগুপ্ত তার পথের পথিক করে নিয়েছে।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে তোমার তেজস্বী লেখনী সকলের মনে বল ও সাহস জুগিয়েছে, ভারত মায়ের এত অপরূপ রূপ বর্ণন যেখানে মায়ের হাতে খড়্গ, ললাট , নেত্র অগ্নিবরণ, এক সঙ্ঘারকারিণী রূপ, আবার কোথাও শষ্যশ্যামলা মাতৃ রূপ। তুমিই তো একমাত্র কবি যার রচিত দুই সংগীত দুই দেশের রাষ্ট্রীয় গীত
তুমি সকল ক্ষেত্রে মানব কে শিখিয়েছ জীবনের সত্য, তার চলার পথে সাহস দিয়েছ। তোমার লেখনী খুশিতে, বিষাদে, তাই তোমার লেখনী তে সেষ করি কবি গুরূ
‘জীবনের পিছে মরণ দাঁড়ায়ে আশার পিছনে ভয়
ডাকিনীর মতো রজনী ভ্রমিছে চিরদিন ধরে দিবসের পিছে
     সমস্ত ধরাময়
যেথায় আলোক সেখানেই ছায়া এই তো নিয়ম ভবে
ও রূপের কাছে চিরদিন তাই এ ক্ষুধা জাগিয়া রবে।।‘
কবিগুরূ গো –জেগে থাকবে এ ক্ষুধা আমৃত্যু তোমাকে জানার, চেনার, তোমার রচনার অগাধ সমুদ্রে ডুব দেওয়ার।

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments