html

Sunday 29 July 2018

প্রশান্ত বারিক

প্রশান্ত বারিকের কবিতা 


জ্বলে যাওয়া 


আজ কোনো কথা নয়, গান নয় -
আজ শুধু জ্বলে যাওয়া। ...
মাটির প্রদীপ  হয়ে বসে থাকা 
               তুলসী তলায়। 


কৃষক 


বৃষ্টি-স্নাত ওই উর্বরা ভূমির দিকে চেয়ে 
নেচে উঠে আমার এই কৃষিকের মন. 
অথচ ও মাটি আমার নয়-
তার, যে জানেনা প্রকৃত কর্ষণ। 


মানুষ 


ঘাস ও পাথরের সহনশীলতা 
             আমার নেই.
আমি তো চিরকালের সেই এক 
ছেঁড়া ফাটা সামান্য মানুষ। ..
মৃদু রক্ত ক্ষরণে তাই আর্তনাদ।...
অগ্ন্যুত্পাতে ফেঁপে ওঠে,
                 ভেতর বাহির।


থেকো যেনো তুমি 


এই যে পথ , দুই পাশে দেবদারু বীথি -
এই পথে একদিন - নগ্ন পায়ে-
একা একা চলে যাবো আমি। 
দুঃখ করোনা তাতে।
এই রকম এলোচুলে-
শাঁখা ও সিঁদুরের গন্ধভরা দেহে 
সেদিনও  অন্য কারো প্রতীক্ষায় থেকো যেন তুমি।


নক্ষত্র গান 


ঘুমন্ত তোমার দেহ থেকে 
দস্যু হাত-গুলি। ....
নির্মম ছিঁড়ে নিলো, ফুল  ও  সজীব যত পাতা। .
যন্ত্রনায় কিরকম ফেঁপে উঠল শাখা প্রশাখা। 
তবু তুমি , প্রতিবাদ করলে  না কেনো 
কেননা তখন, হিরণ্ময় নক্ষত্রের গানে - ভরে আছে ,
                                       হৃদয় তোমার। 


 ফিরে আসা 


মাটির  গভীরে শুয়ে দেখি 
তোর দুচোখে এতো মায়াবী স্বপ্ন। ..
হাস্নুহানার গন্ধ চারদিকে। ..
অন্ধকার খাদের ভেতর থেকে 
তাই তো বারে বারে উঠে আসি -
কঙ্কাল হাতখানি দিয়ে ছুঁতে যাই 
তোর ঘুমন্ত মুখের  ফুল..


 গাছ 

(শশাঙ্খ শেখর মুখোপাধ্যায় শ্রদ্ধাভাজনেষু )

প্রকৃত  গাছের কাছে এলে 
তৃণতম এ যায় মানুষ-
তখন সমূহ অহংকার তার 
সবুজ নির্যাস হয়ে 
        ভূমিতে লুটোয়। 
প্রকৃত গাছের কাছে এসে 
বুঝেছি  এই নিরালায়। 


ওষধি বৃক্ষের তলে 

(ধূর্জটি চন্দ শ্রদ্ধাভাজনেষু )

সব পথেই কিছু কিছু কাঁটা থাকে,
খানা খন্দ থাকে। ....
তবু এসবই শেষ কথা নয়-
সন্ধ্যার সে নদীর ঘাটে 
নক্ষত্রের আলো বুকে, প্রতীক্ষায় থাকে এক 
                                গন্ধ বকুল। ......
তখন সমস্ত ক্ষত মুলে-
শীতল-চন্দন  গন্ধ ,
ওষুধি বৃক্ষের তোলে, দুলে উঠে প্রিয়  ভূমি, 
                          আদিম নিবাস।

তবে কেন তুমি আজ 

 ( অপূর্ব মজুমদার শ্রদ্ধাবাজনেষু )

যদিও পাথর।... তবুও তোমার তো ছিল জানি, 
ঢোল ঢোলে কালো জল। ...
ভাঁট ফুল। ....উড়িধান। ....পদ্ম। ... সালুক -
ছিল প্রিয়  আঁশ গন্ধ , ...কোমলতা নীল শঙ্খিনীর। 
তবে কেন তুমি আজ জলজ স্বপ্নহীন। .স্মৃতিহীন। ....
আত্মাহীন কামী ,ধু ধু মাঠে নির্ঘুম পড়ে থাকো এক-
নোন বুক ক্ষয়ে যায়- তীব্র সূর্যোদহনে। ...
পরমান্ন হাতে নিয়ে উঠে কোনো আসে না তো 
                          অন্নদা সুজাতা। 



করিডর 


কে ও ? ফুল নাকি। 
সাদা গাউন পরে স্টেথিস্কোপ হাতে হেঁটে গেল 
টিমটিমে আলো জ্বলা সুনসান করিডর দিয়ে। ......

অজস্র ঝিঁঝিপোকা, ঝিঁঝিপোকার গুঞ্জন মাথার ভেতর। 

বালিয়াগুড়ির ডাঙায় দাঁড়িয়ে অপরূপ সূর্যাস্ত -

কচি-ধান খাওয়ার অপরাধে 
হরিণীর মত সুন্দর প্রথম গর্ভীনী আমাদের ছাগলটিকে 
অহি মোড়ল আলের উপর আছড়ে মেরে ফেললে ,

ওঃ মাগো।  কি রক্ত-
ছাগল খুঁজতে খুঁজতে -
দিদির হাত-ধরে, বালিয়াগুড়ির রক্তিম ডাঙায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত। ......
                               সেই কবে ? সেই  কবে ?

অজস্র ঝিঁঝিপোকা ,ঝিঁঝিপোকার  গুঞ্জন মাথার ভেতর। 
হলুদ ঝিঙে ফুলে , ঝিঙে ফুলে ভোরে যাচ্ছে রাঙামাটির উঠোন আমার -
গভীর অন্ধকার নেমে  আসছে
 বাঁশ বাগানের মাথার উপর থেকে শ্রাবন সন্ধ্যার ঝমঝম অন্ধকার। ......

অজস্র ঝিঁঝিপোকা কোথায় অন্ধকারে- কেবলই গুঞ্জন 
অন্ধকার থেকে মাথার ভেতর।

কে ও ? ফুল নাকি !
সাদা গাউন পরে স্টেথিস্কোপ হাতে চলে গেল, 
সম্মুখে আমার -অজগরের হাঁ টিমটিমে আলো জ্বলা ওই সুনসান লম্বা করিডর -.

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments